বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রদান ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৭ই জানুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সারাদেশে ভোটগ্রহন চলে। এই ভোটগ্রহণকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কারচুপি, অনিয়ম কম-বেশি ছিলোই। ভোটার উপস্থিতি কিছু কিছু কেন্দ্রে থাকলেও সবমিলিয়ে এই নির্বাচন ভোটারদের টানতে পারেনি। এর প্রধান কারন হচ্ছে ভোটে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না করা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে জেলে আটকে রেখে অনেকটা একতরফা নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করেছেন শেখ হাসিনা ও তার দল।
চিত্র: নির্বাচন চলাকালীন চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার পাহাড়তলী কলেজের ভোটকেন্দ্রে অস্ত্র হাতে এক যুবক
৭ই জানুয়ারির এই ভোটে সবথেকে বেশি কারচুপির চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-১ আসনে। যেখানে সর্বমোট ৭ জন প্রার্থী থাকলেও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গিয়েছিলো নৌকা বনাম লাঙ্গলের। তবে ভোট গণনা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন সেই আসনে।
পাশাপাশি এই নির্বাচনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে শিশুদের ভোট প্রদান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে প্রায় ৬-৭ বছরের এক বাচ্চা মেয়ে কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে কোনো ভোটই পড়েনি। আবার একটি কেন্দ্রে দেখা মিলেছে ভোট গ্রহণ ও গণনার আগেই রেজাল্টশিটে প্রিজাইডিং অফিসার তার স্বাক্ষর দিয়ে রেখেছেন।
চিত্র: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে দুই শিশু
চিত্র: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে দুই শিশু (২)
এদিকে বিএনপি-জামায়াতবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসন বরাদ্দ নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। আওয়ামী লীগের সাথে ভাগাভাগি করে পাওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জিতেছে জাপার প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে হেরেছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।
তবে সবথেকে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হিসাব-নিকেষ। তিনি প্রথমে মিডিয়ার সামনে জানান ২৮ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। পরে সচিব তাকে সংশোধন করে দিয়ে জানান, স্যার ৪০ শতাংশ হবে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবার জানান, ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। ভোট গণনা শেষ হলে কিছুটা বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। তবে ভোট শেষ হওয়ার মাত্র এক ঘন্টা আগে বেলা ৩ টায় তিনি মিডিয়াকে জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। সারাদিন ভোটারের কম উপস্থিতির পর এই শেষ এক ঘন্টায় কিভাবে প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট পড়লো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সবকিছু বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশ যে উত্তর কোরিয়ান স্টাইলে এই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পার করেছে তা বলতে কোনো দ্বিধাদন্ধ থাকে না। প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে ভরে এই নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিশ্ববাসীর কাছে এটাই এখন দেখার বিষয়। #