বাংলাদেশ থেকে প্রথম ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন আওয়ামী লীগ সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে ফ্রান্সে নির্বাসিত বাংলাদেশি চিকিৎসক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। মূলত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ ডাক শুরু হয়। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে। এরই প্রক্ষিতে ১৭ই জানুয়ারি ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ভারত বিদ্বেষী এই ক্যাম্পেইনের সূচনা হয়।
এর পরের সপ্তাহে ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে মারা যান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্য। হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর বাংলাদেশের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনার পরপর ভারত বিদ্বেষী আন্দোলন তীব্রভাবে সামনে আসে।
বাংলাদেশে যখন ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা তুঙ্গে তখনও বিএসএফের গুলিতে অনবরত প্রাণ যাচ্ছে সীমান্ত এলাকার মানুষদের। ১৭ই মার্চ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরেক বাংলাদেশী। যার ফলে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষী এই আন্দোলন দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকি ভট্টাচার্যের ডাক দেওয়া এই ক্যাম্পেইন মাত্র দুমাসের মাথায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে সাড়া ফেলেছে বিদেশেও। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরাও এই ক্যাম্পেইনে সামিল হয়েছেন পুরোদমে। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও তার নিয়মিত প্রেসব্রিফিংয়ে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। ১২ই মার্চ ‘ইন্ডিয়া আউট’ নিয়ে বাংলাদেশী সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, “এই প্রচারণা সম্পর্কে আমরা অবহিত। আমি অবশ্যই ভোক্তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না- সেটা বাংলাদেশ হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করি। অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করাসহ অভিন্ন স্বার্থে দুই দেশের সরকারের সঙ্গেই আমরা অব্যাহতভাবে কাজ করে যাব।”
এদিকে ভারতের হস্তক্ষেপে ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতে, “ইন্ডিয়া আউট” প্রচারণা বিরোধী দলগুলো চালাচ্ছে। যারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে তাদের পতনের জন্য ভারতকে দোষারোপ করছে।’
১৯ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনের সমর্থনে প্রায় ৩ লাখ হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। এবং এক্সে (টুইটার) প্রায় ৫ হাজার হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করা হয়েছে।
‘ইন্ডিয়া আউট’ যে হারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তাতে বলা যায় শুধু বিরোধী দলই নয়, সাধারণ জনগণেরও বড় একটি অংশ এই দেশটাকে ভারতের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত দেখতে চায়। এই ভারত বিদ্বেষী আন্দোলন থামানোর মূল চাবি এখন ভারতের হাতে। শুধুমাত্র একটি দলের সাথে বন্ধুত্ব না করে ভারত যদি পুরো বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়ায় তবেই হয়তো এই ভারত বিদ্বেষী মনোভাব বাংলাদেশীদের মন থেকে দূর হবে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষকরা।