এই জামায়াতে ইসলামী যেন ‘আওয়ামী লীগ ২.০’

এই জামায়াতে ইসলামী যেন ‘আওয়ামী লীগ ২.০’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। হিরো কিংবা ভিলেন, সব চরিত্রেই যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে জামায়াত। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী শাসনামলে সবচেয়ে বেশি গুম, খুন, অত্যাচারের শিকার হয়েছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আর এখন সেই অত্যাচারকারীদেরই পুনর্বাসন কিংবা ক্ষমা করতে যেনো সবার আগে প্রস্তুত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুধু তাই নয়, সেই আওয়ামী স্টাইলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন জুলুম-নির্যাতনকেই যেনো কপি-পেস্ট করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পর জামায়াতে ইসলামীর সুযোগ তৈরি হয়েছিলো জনগণের সাথে স¤পৃক্ততা বাড়ানোর। তবে বিভিন্ন সময়ে বেফাস মন্তব্য কিংবা দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে দিনদিন যেনো জনগণের সাথে দূরত্ব বাড়ছে দলটির। জামায়াতে আমীর সর্বদা জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বললেও দলের নেতাকর্মীরা তা শুনছেন কই! বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মী দ্বারা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু অত্যাচারের নমুনা পড়ে আসি চলুন।

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
১ জানুয়ারি ২০২৫, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তার মিলিটারির বাড়ির সামনে বরগুনার যুবদল নেতা নাসির হাওলাদারকে (৩৮) কুপিয়ে ও দুই পায়ের রগ কেটে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটজনের নামে মামলা হয়েছে এবং এরা সবাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামিরা হলেন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের ইউনিট সভাপতি ঈসা রুহুল্লাহ (৩৮), পৌর ছাত্রশিবিরের সভাপতি কাইউম (২৪), আব্দুস সালাম মুন্সী (৫৫), হাসান (২৫), ইব্রাহিম (১৯), আবু সাঈদ (২৩), রাব্বি (১৯) ও তাঁর বাবা মাহবুব (৫২)।

ফেসবুক পোস্টের জেরে হেনস্তা
বি এম হুমায়ুন কবির। বেদকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (বরখাস্ত) তিনি। সম্প্রতি তিনি তার এক ফেসবুক পোস্টে জামায়াতে আমিরকে ইঙ্গিত করে লিখেন, ‘এ মালটাকে খুব ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম তার রাজনীতি শুরু হয় বামদের হাত ধরে! উপরন্তু সে একজন ব্যবসায়ী!’ পাশাপাশি জামায়াতকে নিয়ে আরও কিছু সমালোচনামূলক পোস্ট করেন তিনি। এইসব দেখে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জামায়াত অফিসে যেতে বলে বি এম হুমায়ুন কবিরকে। অফিসে যেতে রাজি না হলে লোক পাঠিয়ে ৮/১০ জন তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অফিসে। এ সময় তারা হুমায়ুন কবিরকে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে।
তার ভাষ্যমতে, জামায়াত অফিসে উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল্লাহ, বেদকাশি ইউনিয়ন আমির মাস্টার নূর কালামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রিমান্ডের মতো তারা আমাকে জেরা, নানা কটূক্তি করে হেনস্তা করেন, আমার মোবাইল চেক করে কল রেকর্ড ও ছবি মুছে ফেলেন। ডিসপ্লে­ও ভেঙে ফেলেন। পরে তারা পুলিশের কাছে তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ থানায় না নিয়ে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

আওয়ামীলীগকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া জামায়াত
একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ৩ জানুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যায় আটক করা হয় গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল সিকদারকে।
এই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে ওইদিন রাতে থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীরা। তাকে ছাড়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছিলো পুলিশ। ওইসময় বিক্ষোভকারী জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর সদর উপজেলার নায়েবে আমির আব্দুল বারী বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, ‘পুলিশ যাকে ধরেছে, তিনি বর্তমানে আমাদের সংগঠনের লোক।’

যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে তদবির!
বাংলা আউটলুকে প্রকাশিত এক সংবাদে উঠে এসেছে যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিতে জামায়াত নেতাদের তদবিরের ঘটনা। ১৪ই জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর টাঙ্গাইল জেলা ও শহর শাখার নেতা-কর্মীরা যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের ছাড়িয়ে আনতে সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদের সাথে দেখা করেন। বিগত সময়ে আটককৃত মানিক বাবু ও ইসমাইল দুজনে টাঙ্গাইল সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, শহর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান ইমুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এছাড়া মানিক বাবু ২০১৯ সালের টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী যুবলীগের অনুমোদিত আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় ২০ নম্বর সদস্য। টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শহিদুল ইসলামের ভাষ্যমতে যে দুজনকে আটক করা হয়েছে তারা নাকি জামায়াতের কর্মী। তারা এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। তবে এখন তারা জামায়াতের কর্মী।

এভাবেই ধাপে ধাপে আওয়ামীগকে পুনর্বাসন কিংবা আওয়ামী লীগ ২.০ বনে যাওয়ার পথে হাটছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গত বছরগুলোতে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আওয়াজ ওঠানো এই দল ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় যাওয়ায় জনগণের সাথে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছেই। একাত্তরে ইতিহাসের ভুল পাতায় থাকা এই দল এবার জেনজি-দের মন কতটুকু আকৃষ্ট করবে তাদের নতুন রাজনীতি দিয়ে তা দেখার বিষয়। তবে তাদের এই আওয়ামী স্টাইল কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নিঃসন্দেহেই বলা যায় জেন-জিদের সাথে তাদের দূরত্ব দিনকে দিন বাড়বেই। #

লেখক: আব্দুল ওয়াহিদ তালিম, মানবাধিকার কর্মী। ইমেইল – abdulwahid.talim@gmail.com

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *