প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ কারা, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক কী

প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ কারা, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক কী

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার হাসপাতালে হামলার জন্য প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ বা পিআইজে-কে দায়ী করে বলেছে এ সংগঠনটির ছোঁড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েই ওই ঘটনা ঘটেছে।

তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র সংগঠনটি ইতোমধ্যেই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস ও মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। ভয়াবহ ওই হামলায় পাঁচশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

পিআইজে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে ইসরায়েল লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য।

কারা এই পিআইজে?

হামাসের হামলার ঘটনার পর ইসরায়েল এখন গাজায় স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এরকম সময়ে হাসপাতালে হামলা আর হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েল পিআইজেকে দায়ী করার পর সংগঠনটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও এটি আসলে গাজা উপত্যকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিআইজে মূলত সুন্নি ইসলামপন্থীদের সশস্ত্র সংগঠন যারা একটি ইসলামি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের শপথ নিয়েছে।

তবে হামাসের মতো এটিও ইরান সমর্থিত বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে বলা হয়।

তাদের মতো এটি একই রকম ইসলামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী, যারা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার লক্ষ্য ঘোষণা করছে। কারণ তারা মনে করে ফিলিস্তিনি ভূমিতে অন্যায়ভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে।

১৯৭৯ সালে এই সংগঠনটি এক সময় মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। সশস্ত্র এই সংগঠনটি মূলত ইরানের বিপ্লব থেকে উদ্দীপ্ত এবং ইরান ছাড়াও সিরিয়া ও লেবাননের হেজবুল্লাহ থেকেও তারা সমর্থন পেয়ে আসছে।

পিআইজের প্রতিষ্ঠাতা ফাথি শাকাকি ও আবদ আল আজিজ আওদা আগে মুসলিম ব্রাদারহুডেরই সদস্য ছিলেন এবং তারা দুজনই মনে করতেন মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড ফিলিস্তিন বিষয়ে পুরোপুরি অঙ্গীকারাবদ্ধ নয়।

১৯৮১ সালে মিশরের তখনকার প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডের পর মিশর সরকার পিআইজেকে গাজার দিকে সরিয়ে দেয়। কারণ ততদিনে পিআইজে মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে আলাদা হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে সংগঠনটিকে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করে এবং এর সেক্রেটারি জেনারেলকে ২০১৪ সালে বিশেষভাবে চিহ্নিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে।

হামাস ও পিআইজে

ইসলামিক জিহাদ বা পিআইজে গাজার আরেক সশস্ত্র সংগঠন হামাসের থেকে আলাদাভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন মতো কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা তাদের রয়েছে বলেই মনে করা হয়।

সংগঠনটির আলাদা সামরিক শাখা আছে যার নাম আল-কুদস ব্রিগেড এবং তাদেরও নিজস্ব রকেট ভাণ্ডার আছে। হামাসের চেয়ে এ সংগঠনটিকে আরও উগ্রপন্থী বলে বিবেচনা করা হয়।

নব্বইয়ের দশক থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করে অনেক হামলার সাথেই এ সংগঠনটির নাম উঠে এসেছিলো।

তবে কখনো কখনো হামাসের সাথে সমন্বয় করেও তারা কর্মকাণ্ড চালায়। যদিও ইসরায়েলের সাথে লড়াইয়ের কৌশল কি হবে, তা নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ আছে।

ইসরায়েল, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ছাড়াও সিরিয়া ও লেবাননেও এই সংগঠনের উপস্থিতি আছে। এছাড়া ইরানে তাদের অফিস আছে।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে শুরু করে পরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশ কিছু আত্মঘাতী হামলার সাথে এই গোষ্ঠীর জড়িত থাকার কথা শোনা যায়।

হামাসের মতো পিআইজেও ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির বিরোধী। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে ওই শান্তি চুক্তি এখন পর্যন্ত কার্যকর যায়নি।

এমনকি শান্তি চুক্তিকে ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্ব দেয়া পিএলওর বর্তমান নেতা মাহমুদ আব্বাসের গাজার ওপর কার্যত কোন কর্তৃত্বই নেই। বরং ২০০৭ সালে স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গাজার কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছিলো হামাস।

অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের পর থেকে বেশিরভাগ নির্বাচন পিআইজে বয়কট করে আসছে।

সূত্র: বিবিসি

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *